বছর খানেক আগেও তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গোষ্ঠী ভিত্তিক টেটা যুদ্ধে লিপ্ত হতো গ্রামবাসী। নৌপথে গরু চুরি ও ডাকাতির ঘটনাও ঘটতো। ডাকাত আতঙ্ক মুক্ত ছিলো না সড়ক পথও। বিশেষ করে শীতকালে নদী কেন্দ্রীক গ্রামের বাসিন্দারা থাকতো অধিক ঝুঁকিতে। নদী ও স্থল পথকে মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করতো মাদক কারবারীরা।
কিন্ত বর্তমানের চিত্র ভিন্ন। টেটা যুদ্ধ এখন আর নেই বললেই চলে। চুরি-ডাকাতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। একের পর এক অভিযানে গ্রেপ্তার আর মাদক উদ্ধারে আতঙ্কে অপরাধীরা। স্থল ও নৌ পথের চোরাকারবারি ও মাদক সরবরাহকারীরা আছে দৌড়ের উপরে। রাতের পথে এখন আর নেই ডাকাত আতঙ্ক।
পুলিশ বাহিনীর প্রতি বেড়েঁছে জনগণের আস্থা। কমে আসছে মামলা ও অপরাধের সংখ্যা। জনমনে নেই আতঙ্ক। সড়ক ও নৌ-পথে নির্বিঘ্নে-নির্ভয়ে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ। যার জন্যেই এই উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দা অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে বর্তমানে। বলছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কথা। বাঞ্ছারামপুর ঘুরে এসে রিপোর্ট করেছেন- শরীফ প্রধান।
শুরুর কথা: গেল বছরের ৩ জুলাই বাঞ্ছারামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন অহিংস, মিষ্ঠ ও স্বল্পভাষী, চৌকষ পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ নূরে আলম (নয়ন)। যোগদান করেই বেশ কিছু বিষয়ের উপর পর্যালোচনা করেন তিনি। থানা এলাকার বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ এবং অপরাধীদের চিহিৃত করার মাধ্যমেই শুরু হয় এই পুলিশ কর্মকর্তার অপরাধ দমনের অভিনব কৌশল।
গোষ্ঠী ভিত্তিক টেটা যুদ্ধ: জানা যায়, উপজেলার সোনারামপুর, ছলিমাবাদ ইউনিয়নসহ আশেপাশে বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। যে গ্রাম গুলোতে গোষ্ঠী ভিত্তিক পৃথক পৃথক কয়েকটি দল রয়েছে। যারা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র (টেটা-বল্লম, ছুরি ও রামদা) নিয়ে যুদ্ধে বা দাঙ্গায় লিপ্ত হতো।
এই যুদ্ধের ক্ষতি, কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত করতে এই পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিটি দলের সাথে পৃথক সভা করেন। তারপর উভয় দলকে একত্রিত করেন। আলোচনা সভার মাধ্যমে এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন এবং তরুণ প্রজন্মকে এটা থেকে ফিরে এসে শিক্ষা গ্রহন ও চাকুরী জীবনে প্রবেশ করতে উৎসাহিত করেন। এর ফলে টেটা যুদ্ধ এখন নেই বললেই চলে।
ডাকাতি নিরোধে ভূমিকা: বছরে তিন মাস (ডিসেম্বর, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি) এই সময় গুলোতে সড়ক ও নৌপথে ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে এই থানায়। বিশেষ করে পাহাড়িয়াকান্দি, সোনারামপুর, মানিকপুর, উজানচর ও দড়িয়াদৌলত ইউনিয়নবাসী বিভিন্ন নদী দিয়ে চলাচল করে।
এই সকল গ্রামগুলো নদী কেন্দ্রীক হওয়ায় ডাকাত দল রাতের বেলা নৌকা নিয়ে এসে বাড়িঘরে হামলা করে এবং গবাদিপশু সহ নানা ধরনের মালামাল নিয়ে যেতো। সেই সাথে নৌপথে মালবোঝাই বিভিন্ন পরিবহনে ডাকাতি করতো। এছাড়াও বাঞ্ছারামপুর-হোমনা, বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে ডাকাতি সংঘটিত হতো।
ডাকাত প্রতিরোধ করার লক্ষে ওই সকল গ্রামগুলোতে গ্রাম পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বয়ে সড়ক ও নৌপথে রাতের বেলা পাহারার ব্যবস্থা করায় বর্তমানে চুরি-ডাকাতি শূন্যের কোঠায়। বিভিন্ন সময়ে অভিযানে ১০ ডাকাতকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ।
মাদক উদ্ধার: স্থল ও জল পথের কারনে, অপরাধীরা মাদক পরিবহন ও পাচার করতো খুব সহজেই। বাঞ্ছারামপুর-কসবা সড়কটি মাদক সেবীদের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করতো। বিশেষ করে বর্ডার থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে কসবা হয়ে এই রোড ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা, উপজেলায় সরবরাহ করতো। গত ১০ মাসে ২৬টি অভিযানে ১০ মন গাজা ও ৩ হাজার ৩শ ১৫পিছ ইয়াবা আটক করা হয়। এতে মাদক সরবরাহের সংখ্যা কমে আসছে।
বিট পুলিশিং কার্যক্রম: প্রতিটি ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডে বিট পুলিশিং-এর কার্যক্রম বেগবান করা হয়েছে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেক বিট অফিসার মাসে কমপক্ষে ১৮দিন বিট এলাকা পরিদর্শন, আলোচনা, মতবিনিময়সহ নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে থাকেন।
যার ফলে সাধারণ জনগনের সাথে পুলিশের সু-সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। দেখা গেছে, কোন ধরনের ঝগড়া বিবাদের সূত্রপাত হলেই কেউ না কেউ পুলিশকে খবর দেয়। এতে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছতে সক্ষম হয় এবং অপরাধ সংগঠিত হতে বাধা প্রদান করা হয়। এতে আইন শৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে।
দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার : এই অঞ্চলগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্রের তুলনায় দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। কিছু হলেই, টেটা, বল্লম, ছোরা ও রামদা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দাঙ্গা দমনের লক্ষে জেলা পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন স্যারের দিকর্নিদেশনা ৩২০টি টেটা, ১২০টি বাঁশের হাতল, রামদা, হকিস্টিকসহ দেশীয় লাঠিসোটা উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ।
এই সকল অস্ত্রের ব্যবহার কমাতে কামার এবং বাঁশ বিক্রেতাদের সাথে মিটিং করে পুলিশ। ছুরি এবং চাপাতির কাস্টমারদের ঠিকানা রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। বাঁশ বিক্রেতারাও ছোট বাঁশ বিক্রির রশিদ ও হিসেব রাখতে হবে। যাতে অপরাধীদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
বাঞ্ছারামপুর পৌর বাজারের ব্যবসায়ী মো. সেলিম রেজা বলেন, বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আইন শৃঙ্খলার পরিবেশ অনেক ভালো। থানা পুলিশ বিভিন্ন বাজার ও গ্রাম অভিযান চালিয়ে টেটাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আর আগের মতো টেটা যুদ্ধ হয় না।
বাঞ্ছারামপুর থানার এএসআই ইলিয়াছ হোসেন বলেন, স্যারের নির্দেশে, নদী ও সড়ক পথে স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি করে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করি। যার ফলে, ডাকাতি এখন নেই বললেই চলে। এছাড়াও আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছি অপরাধ দমনের জন্য।
ওই উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জালাল মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নটি নদী ঘেরা। এখানে দু'টি গ্রাম রয়েছে যাঁরা সামান্য বিষয়ে টেটা যুদ্ধে লিপ্ত হতো। ওসি সাহেব আসার পর আমরা এই যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
এছাড়াও নদী পথে চুরী ডাকাতি বন্ধে ওনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা এখন শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছি। বাঞ্ছারামপুর থানার এসআই মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, স্যার এখানে যোগদান করার পর একটি বিষয়ের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। স্যার টেটা যুদ্ধে লিপ্ত এলাকাগুলো সনাক্ত করে তাদের সাথে একাধিকবার বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে এই দাঙ্গা নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়েছেন।
অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ নূরে আলম বলেন, যোগদান করেই কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছি। এখানেও অন্য উপজেলার মতো কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। যেখানে গোষ্ঠীভিত্তিক টেটা যুদ্ধ বা দাঙ্গা লেগে যায়। সেটাকে সমূলে নির্মূল করার জন্য নানা ভাবে কাজ করি।
আর এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহন করি। আমার ইচ্ছে বাঞ্ছারামপুরকে সম্পূর্ণ রুপে টেটা যুদ্ধ মুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা। তাই, ওই অঞ্চলের তরুণ যুবকদেরকে মোটিভেশন করি। আমি যোগদানের পর আর গোষ্ঠীভিত্তিক দাঙ্গা লাগেনি। এছাড়াও চুরি-ডাকাতি রোধকল্পে অভিনব কার্যক্রম গ্রহন করি এবং এই দশ মাসে বিপুল পরিমান মাদক আটক করি আমরা।
পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ- এই স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে, পুলিশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সাধারণ জনগনের সাথে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধি করি। যাতে পুলিশের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি পায়। যে কয়দিন থাকবো মানুষের কল্যানে কাজ করে যাব। বাঞ্ছারামপুরকে চোর-ডাকাত, মাদক ও দাঙ্গা মুক্ত করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
মোঃ নূরে আলম-এর মতো পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আইকন। তাঁর সুন্দর আচরণ, মিষ্ঠ ভাষায় সাধারণ মানুষের মনে যায়গা করে নিয়েছেন। আর এতেই পুলিশের প্রতি বাড়ছে জনসাধারণের আস্থা। এমনটাই মন্তব্য স্থানীয় বাসিন্দাদের।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাসিন্দা এই পুলিশ কর্মকর্তা ইতিপূর্বে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, সুধারাম থানা ও নোয়াখালী ডিবিতে ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
#বিশেষ প্রতিবেদন #পুলিশ #বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা # টেটা যুদ্ধ #গোষ্ঠীভিত্তিক দাঙ্গা # আইন শৃঙ্খলা।
পিকে/এসপি
কিন্ত বর্তমানের চিত্র ভিন্ন। টেটা যুদ্ধ এখন আর নেই বললেই চলে। চুরি-ডাকাতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। একের পর এক অভিযানে গ্রেপ্তার আর মাদক উদ্ধারে আতঙ্কে অপরাধীরা। স্থল ও নৌ পথের চোরাকারবারি ও মাদক সরবরাহকারীরা আছে দৌড়ের উপরে। রাতের পথে এখন আর নেই ডাকাত আতঙ্ক।
পুলিশ বাহিনীর প্রতি বেড়েঁছে জনগণের আস্থা। কমে আসছে মামলা ও অপরাধের সংখ্যা। জনমনে নেই আতঙ্ক। সড়ক ও নৌ-পথে নির্বিঘ্নে-নির্ভয়ে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ। যার জন্যেই এই উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দা অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে বর্তমানে। বলছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কথা। বাঞ্ছারামপুর ঘুরে এসে রিপোর্ট করেছেন- শরীফ প্রধান।
শুরুর কথা: গেল বছরের ৩ জুলাই বাঞ্ছারামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন অহিংস, মিষ্ঠ ও স্বল্পভাষী, চৌকষ পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ নূরে আলম (নয়ন)। যোগদান করেই বেশ কিছু বিষয়ের উপর পর্যালোচনা করেন তিনি। থানা এলাকার বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ এবং অপরাধীদের চিহিৃত করার মাধ্যমেই শুরু হয় এই পুলিশ কর্মকর্তার অপরাধ দমনের অভিনব কৌশল।
গোষ্ঠী ভিত্তিক টেটা যুদ্ধ: জানা যায়, উপজেলার সোনারামপুর, ছলিমাবাদ ইউনিয়নসহ আশেপাশে বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। যে গ্রাম গুলোতে গোষ্ঠী ভিত্তিক পৃথক পৃথক কয়েকটি দল রয়েছে। যারা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র (টেটা-বল্লম, ছুরি ও রামদা) নিয়ে যুদ্ধে বা দাঙ্গায় লিপ্ত হতো।
এই যুদ্ধের ক্ষতি, কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত করতে এই পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিটি দলের সাথে পৃথক সভা করেন। তারপর উভয় দলকে একত্রিত করেন। আলোচনা সভার মাধ্যমে এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন এবং তরুণ প্রজন্মকে এটা থেকে ফিরে এসে শিক্ষা গ্রহন ও চাকুরী জীবনে প্রবেশ করতে উৎসাহিত করেন। এর ফলে টেটা যুদ্ধ এখন নেই বললেই চলে।
ডাকাতি নিরোধে ভূমিকা: বছরে তিন মাস (ডিসেম্বর, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি) এই সময় গুলোতে সড়ক ও নৌপথে ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে এই থানায়। বিশেষ করে পাহাড়িয়াকান্দি, সোনারামপুর, মানিকপুর, উজানচর ও দড়িয়াদৌলত ইউনিয়নবাসী বিভিন্ন নদী দিয়ে চলাচল করে।
এই সকল গ্রামগুলো নদী কেন্দ্রীক হওয়ায় ডাকাত দল রাতের বেলা নৌকা নিয়ে এসে বাড়িঘরে হামলা করে এবং গবাদিপশু সহ নানা ধরনের মালামাল নিয়ে যেতো। সেই সাথে নৌপথে মালবোঝাই বিভিন্ন পরিবহনে ডাকাতি করতো। এছাড়াও বাঞ্ছারামপুর-হোমনা, বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে ডাকাতি সংঘটিত হতো।
ডাকাত প্রতিরোধ করার লক্ষে ওই সকল গ্রামগুলোতে গ্রাম পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বয়ে সড়ক ও নৌপথে রাতের বেলা পাহারার ব্যবস্থা করায় বর্তমানে চুরি-ডাকাতি শূন্যের কোঠায়। বিভিন্ন সময়ে অভিযানে ১০ ডাকাতকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ।
মাদক উদ্ধার: স্থল ও জল পথের কারনে, অপরাধীরা মাদক পরিবহন ও পাচার করতো খুব সহজেই। বাঞ্ছারামপুর-কসবা সড়কটি মাদক সেবীদের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করতো। বিশেষ করে বর্ডার থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে কসবা হয়ে এই রোড ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা, উপজেলায় সরবরাহ করতো। গত ১০ মাসে ২৬টি অভিযানে ১০ মন গাজা ও ৩ হাজার ৩শ ১৫পিছ ইয়াবা আটক করা হয়। এতে মাদক সরবরাহের সংখ্যা কমে আসছে।
বিট পুলিশিং কার্যক্রম: প্রতিটি ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডে বিট পুলিশিং-এর কার্যক্রম বেগবান করা হয়েছে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেক বিট অফিসার মাসে কমপক্ষে ১৮দিন বিট এলাকা পরিদর্শন, আলোচনা, মতবিনিময়সহ নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে থাকেন।
যার ফলে সাধারণ জনগনের সাথে পুলিশের সু-সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। দেখা গেছে, কোন ধরনের ঝগড়া বিবাদের সূত্রপাত হলেই কেউ না কেউ পুলিশকে খবর দেয়। এতে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছতে সক্ষম হয় এবং অপরাধ সংগঠিত হতে বাধা প্রদান করা হয়। এতে আইন শৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে।
দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার : এই অঞ্চলগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্রের তুলনায় দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। কিছু হলেই, টেটা, বল্লম, ছোরা ও রামদা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দাঙ্গা দমনের লক্ষে জেলা পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন স্যারের দিকর্নিদেশনা ৩২০টি টেটা, ১২০টি বাঁশের হাতল, রামদা, হকিস্টিকসহ দেশীয় লাঠিসোটা উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ।
এই সকল অস্ত্রের ব্যবহার কমাতে কামার এবং বাঁশ বিক্রেতাদের সাথে মিটিং করে পুলিশ। ছুরি এবং চাপাতির কাস্টমারদের ঠিকানা রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। বাঁশ বিক্রেতারাও ছোট বাঁশ বিক্রির রশিদ ও হিসেব রাখতে হবে। যাতে অপরাধীদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
বাঞ্ছারামপুর পৌর বাজারের ব্যবসায়ী মো. সেলিম রেজা বলেন, বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আইন শৃঙ্খলার পরিবেশ অনেক ভালো। থানা পুলিশ বিভিন্ন বাজার ও গ্রাম অভিযান চালিয়ে টেটাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আর আগের মতো টেটা যুদ্ধ হয় না।
বাঞ্ছারামপুর থানার এএসআই ইলিয়াছ হোসেন বলেন, স্যারের নির্দেশে, নদী ও সড়ক পথে স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি করে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করি। যার ফলে, ডাকাতি এখন নেই বললেই চলে। এছাড়াও আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছি অপরাধ দমনের জন্য।
ওই উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জালাল মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নটি নদী ঘেরা। এখানে দু'টি গ্রাম রয়েছে যাঁরা সামান্য বিষয়ে টেটা যুদ্ধে লিপ্ত হতো। ওসি সাহেব আসার পর আমরা এই যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
এছাড়াও নদী পথে চুরী ডাকাতি বন্ধে ওনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা এখন শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছি। বাঞ্ছারামপুর থানার এসআই মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, স্যার এখানে যোগদান করার পর একটি বিষয়ের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। স্যার টেটা যুদ্ধে লিপ্ত এলাকাগুলো সনাক্ত করে তাদের সাথে একাধিকবার বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে এই দাঙ্গা নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়েছেন।
অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ নূরে আলম বলেন, যোগদান করেই কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছি। এখানেও অন্য উপজেলার মতো কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। যেখানে গোষ্ঠীভিত্তিক টেটা যুদ্ধ বা দাঙ্গা লেগে যায়। সেটাকে সমূলে নির্মূল করার জন্য নানা ভাবে কাজ করি।
আর এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহন করি। আমার ইচ্ছে বাঞ্ছারামপুরকে সম্পূর্ণ রুপে টেটা যুদ্ধ মুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা। তাই, ওই অঞ্চলের তরুণ যুবকদেরকে মোটিভেশন করি। আমি যোগদানের পর আর গোষ্ঠীভিত্তিক দাঙ্গা লাগেনি। এছাড়াও চুরি-ডাকাতি রোধকল্পে অভিনব কার্যক্রম গ্রহন করি এবং এই দশ মাসে বিপুল পরিমান মাদক আটক করি আমরা।
পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ- এই স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে, পুলিশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সাধারণ জনগনের সাথে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধি করি। যাতে পুলিশের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি পায়। যে কয়দিন থাকবো মানুষের কল্যানে কাজ করে যাব। বাঞ্ছারামপুরকে চোর-ডাকাত, মাদক ও দাঙ্গা মুক্ত করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
মোঃ নূরে আলম-এর মতো পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আইকন। তাঁর সুন্দর আচরণ, মিষ্ঠ ভাষায় সাধারণ মানুষের মনে যায়গা করে নিয়েছেন। আর এতেই পুলিশের প্রতি বাড়ছে জনসাধারণের আস্থা। এমনটাই মন্তব্য স্থানীয় বাসিন্দাদের।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাসিন্দা এই পুলিশ কর্মকর্তা ইতিপূর্বে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, সুধারাম থানা ও নোয়াখালী ডিবিতে ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
#বিশেষ প্রতিবেদন #পুলিশ #বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা # টেটা যুদ্ধ #গোষ্ঠীভিত্তিক দাঙ্গা # আইন শৃঙ্খলা।
পিকে/এসপি