পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যারা পোশাক এবং তা রপ্তানি নিয়ে কাজ করছেন তাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিভিন্ন দেশের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তা মাথায় রেখে নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বস্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় বস্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছয় জেলায় ছয়টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন চিন্তাধারার সম্মিলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে দেশে একটি ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময়ে কোন রং ও ডিজাইন ব্যবহার হবে, কোনটার চাহিদা বেশি- এটা একটা ঘূর্ণায়মান অবস্থা এবং প্রতি নিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের পোশাকশিল্পের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট বা রপ্তানিকারক তাদের আমি অনুরোধ করবো, আপনাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পোশাক ব্যবহার হয়ে থাকে, সেভাবে আমরা নতুন বাজার খুঁজে বের করতে পারি।
আসন্ন ৪র্থ শিল্পবিপ্লবে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বড় ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য তার সরকার দেশের জনগণকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলছে। বাংলাদেশের যুব সমাজ অত্যন্ত দক্ষ। তাদের একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তারা উন্নতমানের কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, দ্রুততর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বস্ত্র অধিদপ্তরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়েছে। ই-নথির মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এখন সহজে এবং স্বল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সব সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
পাশাপাশি বস্ত্রখাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) ১৬টি বন্ধ মিল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে (পিপিপি) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সেদিক থেকে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে এই তৈরি পোশাক খাত। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
পোশাকশিল্প নারীর কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের কাজের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে তারা বিশেষ অবদান রাখছে। প্রতিটি পরিবারও আর্থিক সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য জাতির পিতার ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষ তুলে ধরেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বিনা দ্বিধায় এ আশ্বাস আপনাদের দিতে পারি যে, আমাদের আমদানি নির্ভর অর্থনীতি প্যাটার্ন খুব শিগগির পাল্টে যাবে এবং জিনিপত্রের দাম কমানোও সম্ভব হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সেটাই বিশ্বাস করেন এবং আমদানি নির্ভর না থেকে ‘বাণিজ্যে বসতী লক্ষ্মী’- সেটাই তিনি আনতে চান বলে জানান। এক্ষেত্রে আইসিটি পণ্য বা ডিজিটাল ডিভাইসও রপ্তানি ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখছে বলেও উল্লেখ করেন।
আমাদের পণ্যগুলোকে ভ্যালু অ্যাডেড (মূল্য সংযোজন) করেও বাজারজাত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, যাতে একদিকে আমাদের দক্ষ জনশক্তি আরেক দিকে ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হয়।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁতশিল্প আমাদের ঐতিহ্য এবং আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। কারণ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প হচ্ছে এই তাঁত শিল্প। দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ তাঁতশিল্প জোগান দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার তাঁতিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, মূলধন জোগান, গুণগত মানসম্মত তাঁতবস্ত্র উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাঁতিদের ব্যবহার্য উপকরণে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ও সমুদয় মূল্য সংযোজন কর মওকুফ করে আমদানির সুযোগ প্রদান করেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকারে এসেই তাঁতিদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এক সময়কার বিশ্ববিখ্যাত ঢাকাই মসলিনের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতায় নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে ঢাকাই মসলিন কাপড় তৈরির কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলা, সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও ঢাকাই মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার করে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই উচ্চমূল্যের পণ্যটি সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান। পাশাপশি মসলিনের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও)- এর পক্ষে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকাই মসলিনকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। মসলিনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবোতে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ স্থাপন করা হয়েছে।
পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বে আবার পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর বেড়েছে।
তিনি বলেন, তবে, পোশাকশিল্পকে যতটা প্রণোদনা দিয়ে থাকি, সেক্ষেত্রে পাট কৃষিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও সে সুযোগ পাচ্ছে না। সে সুযোগ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর পরিবেশ রক্ষার জন্য পাটজাত পণ্যের বিকল্প কিছু হতে পারে না। এর যতবেশি উৎকর্ষ সাধন হবে, তত বেশি বাজারজাত করা সহজ হবে। আমরা এদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপেরে ফলে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের কারখানাগুলো সবুজ কারখানার মানদণ্ডে বিশ্বে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) হিসাব মতে শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০টিই বাংলাদেশের। ‘ইউএসজিবিসি’ থেকে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত বাংলাদেশে সবুজ কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৭টি। এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে একটি কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তারপরও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা ব্যয় সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পদক্ষেপও সরকার নিয়েছে।
নতুন উদ্বোধন করা ছয়টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট হলো- গোপালগঞ্জে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল গৌরনদীতে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, নওগাঁর মান্দায় শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী তৈরি পোশাকখাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। বর্তমান সরকারের আমলে তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।
এনডি/প্রিন্স
তিনি বলেন, যারা পোশাক এবং তা রপ্তানি নিয়ে কাজ করছেন তাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিভিন্ন দেশের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তা মাথায় রেখে নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বস্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় বস্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছয় জেলায় ছয়টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন চিন্তাধারার সম্মিলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে দেশে একটি ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময়ে কোন রং ও ডিজাইন ব্যবহার হবে, কোনটার চাহিদা বেশি- এটা একটা ঘূর্ণায়মান অবস্থা এবং প্রতি নিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের পোশাকশিল্পের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট বা রপ্তানিকারক তাদের আমি অনুরোধ করবো, আপনাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পোশাক ব্যবহার হয়ে থাকে, সেভাবে আমরা নতুন বাজার খুঁজে বের করতে পারি।
আসন্ন ৪র্থ শিল্পবিপ্লবে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বড় ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য তার সরকার দেশের জনগণকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলছে। বাংলাদেশের যুব সমাজ অত্যন্ত দক্ষ। তাদের একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তারা উন্নতমানের কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, দ্রুততর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বস্ত্র অধিদপ্তরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়েছে। ই-নথির মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এখন সহজে এবং স্বল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সব সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
পাশাপাশি বস্ত্রখাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) ১৬টি বন্ধ মিল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে (পিপিপি) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সেদিক থেকে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে এই তৈরি পোশাক খাত। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
পোশাকশিল্প নারীর কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের কাজের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে তারা বিশেষ অবদান রাখছে। প্রতিটি পরিবারও আর্থিক সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য জাতির পিতার ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষ তুলে ধরেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বিনা দ্বিধায় এ আশ্বাস আপনাদের দিতে পারি যে, আমাদের আমদানি নির্ভর অর্থনীতি প্যাটার্ন খুব শিগগির পাল্টে যাবে এবং জিনিপত্রের দাম কমানোও সম্ভব হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সেটাই বিশ্বাস করেন এবং আমদানি নির্ভর না থেকে ‘বাণিজ্যে বসতী লক্ষ্মী’- সেটাই তিনি আনতে চান বলে জানান। এক্ষেত্রে আইসিটি পণ্য বা ডিজিটাল ডিভাইসও রপ্তানি ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখছে বলেও উল্লেখ করেন।
আমাদের পণ্যগুলোকে ভ্যালু অ্যাডেড (মূল্য সংযোজন) করেও বাজারজাত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, যাতে একদিকে আমাদের দক্ষ জনশক্তি আরেক দিকে ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হয়।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁতশিল্প আমাদের ঐতিহ্য এবং আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। কারণ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প হচ্ছে এই তাঁত শিল্প। দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ তাঁতশিল্প জোগান দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার তাঁতিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, মূলধন জোগান, গুণগত মানসম্মত তাঁতবস্ত্র উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাঁতিদের ব্যবহার্য উপকরণে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ও সমুদয় মূল্য সংযোজন কর মওকুফ করে আমদানির সুযোগ প্রদান করেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকারে এসেই তাঁতিদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এক সময়কার বিশ্ববিখ্যাত ঢাকাই মসলিনের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতায় নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে ঢাকাই মসলিন কাপড় তৈরির কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলা, সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও ঢাকাই মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার করে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই উচ্চমূল্যের পণ্যটি সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান। পাশাপশি মসলিনের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও)- এর পক্ষে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকাই মসলিনকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। মসলিনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবোতে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ স্থাপন করা হয়েছে।
পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বে আবার পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর বেড়েছে।
তিনি বলেন, তবে, পোশাকশিল্পকে যতটা প্রণোদনা দিয়ে থাকি, সেক্ষেত্রে পাট কৃষিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও সে সুযোগ পাচ্ছে না। সে সুযোগ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর পরিবেশ রক্ষার জন্য পাটজাত পণ্যের বিকল্প কিছু হতে পারে না। এর যতবেশি উৎকর্ষ সাধন হবে, তত বেশি বাজারজাত করা সহজ হবে। আমরা এদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপেরে ফলে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের কারখানাগুলো সবুজ কারখানার মানদণ্ডে বিশ্বে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) হিসাব মতে শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০টিই বাংলাদেশের। ‘ইউএসজিবিসি’ থেকে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত বাংলাদেশে সবুজ কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৭টি। এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে একটি কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তারপরও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা ব্যয় সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পদক্ষেপও সরকার নিয়েছে।
নতুন উদ্বোধন করা ছয়টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট হলো- গোপালগঞ্জে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল গৌরনদীতে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, নওগাঁর মান্দায় শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী তৈরি পোশাকখাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। বর্তমান সরকারের আমলে তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।
এনডি/প্রিন্স