
"দুপুরের পর থেকেই সারি সারি বস্তা সাজানো নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলারগুলো এই ঘাটে ভিড়তে থাকে। বেলা ৩ টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ট্রলার এই ঘাটে ভিড়ে খিরা ভরা বস্তা নিয়ে। তারপর এখান থেকে চলে যায় রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসদরের পুরাতন ফেরিঘাট। জানা যায়, এই ঘাটে প্রতিদিন দাউদকান্দির বাহেরচর, হাসনাবাদ, কান্দারগাও, নন্দনপুর, ভাজরা, চেঙ্গাকান্দি, গোলাপেরচর ও গঙ্গাপ্রসাদ। মেঘনা উপজেলার ভাটেরচর, বটতুলী, তালতুলী, সাতমোরা।
তিতাস উপজেলার মোহনপুর, কাককাইলী। মুন্সীগঞ্জ জেলার গাজারিয়া উপজেলার চাষিরচর, ষাটনল, কালিপুরা, ভাসারচর, বৈষারচর, কদমতুলী, বাউশিয়া থেকে ট্রলারের মাধ্যমে এখানে প্রতিদিন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এক থেকে দের হাজার খিরার বস্তা নিয়ে আসে।
ঘাটে নামানোর পর এসকল খিরা চলে যায় রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, টঙ্গী, জয়দেবপুর, কুমিল্লার নিমশার বাজার, লাকমাম, ফেনী, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের রেয়াজ উদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে।
প্রতিটি বস্তায় ৭০ থেকে ৭৫ কেজি মাল থাকে। এসকল বস্তা লোড আনলোড করতে কাজ করছেন প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। বিকেল ৩ টা থেকে মধ্যরাত কিংবা রাতভর কাজ করে শ্রমিকরা। এতে পারিশ্রমিক পাচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঘাটে কাজ করা শ্রমিক মো. রোকন মিয়া বলেন, ৩টা থেকে কাজ শুরু করি। যতক্ষন মাল থাকে ততক্ষন কাজ করি। কখনো সারারাত চলে। কখনো আবার রাত ১২টা। মাল বেশি নামলে বেশি ইনকাম হয়। ১ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।
পুরাতন ফেরিঘাটের আড়তদার আসাদুজ্জামান বলেন, মৌসুমে ৩ মাস চলে ব্যবসা। কৃষকরা আড়তে মাল নিয়ে আসে। তারপর স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার ৪শ থেকে ৫শ পাইকারি ও খুচরা বেপারী এই ঘাট থেকে খিরা নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী হারুন বেপারী বলেন, ৩০ বছর ধরে নোয়াখালী, চৌমুহনী, মাইজদী, সোনাইমুড়ী, লাকশামে আমি খিরার ব্যবসা করে আসছি।
এখানকার খিরা তিতা হয় না। ক্ষেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি বেশি। তাই, অন্য যে কোন জেলার তুলনায় দাউদকান্দির খিরার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন ৪শ ৫শ বস্তা চট্টগ্রামের রেয়াজ উদ্দিন বাজারে নিয়ে যাই। ঢাকার শ্যামবাজার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, ২০ থেকে ৩০ বস্তা মাল নেই প্রতিদিন। এই ঘাট থেকে ১৫/১৬ টাকা কেজিতে কিনে ২০/২২ টাকায় বিক্রি করি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা নুরুদ্দীন বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে ফেনী জেলায় খিরার ব্যবসা করছি। ফেনিতে দাউদকান্দির খিরার চাহিদা সবার আগে । বিকেল থেকে মাল ট্রাকে বোঝাই করে রাতে নিয়ে যাই। তারপর সকালে খুচরা বাজারে তা বিক্রি করি।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়ন ও ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নে প্রায় ৪শ হেক্টর জমিতে খিরার চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে গোলাপেরচর চেঙ্গাকান্দি এক মাঠেই রয়েছে ১২শ বিঘা জমি। কৃষি অফিস আশাবাদী প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ মে.টন খিরার ফলন হবে।
"মানবিক দাউদকান্দি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রুবেল ও সদস্য রোমান মিয়াজী বলেন, ঘাটের নিকটেই আমাদের বাসা। ছোট বেলা থেকেই দেখছি ঘাট থেকে ট্রাকে করে খিরা দেশের বিভিন্নস্থানে যায়। দাউদকান্দির খিরা সাধে অতুলনীয় তাই চাহিদা বেশি।
উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সদর উত্তর ইউনিয়নের গোলাপেরচর এক মাঠে ১২শ বিঘা ও গঙ্গাপ্রসাদ, চেঙ্গাকান্দি মিলে ১৯৫ হেক্টর জমিতে খিরার চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন ভালো। কৃষকরা খুশি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিন জানান, আমার ইলিয়টগঞ্জ ব্লকের টামটা ও ভিকতলা মাঠে ভালো ফলন হয়েছে।
খিরা সংগ্রহ চলছে। খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পেরে কৃষকরা খুশ। আশাবাদী প্রতি হেক্টর জমিতে ২২ থেকে ২৫ মে:টন উৎপাদন হবে।
কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক এআইপি মতিন সৈকত বলেন, বহু বছর আগ থেকে দাউদকান্দিতে খিরা চাষ করে আসছে আমাদের কৃষক। এটা আমাদের ঐতিহ্যের ফসল। এখানকার খিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এটা আমাদের জন্য গৌরবের।
পিকে/এসপি
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসদরের পুরাতন ফেরিঘাট। জানা যায়, এই ঘাটে প্রতিদিন দাউদকান্দির বাহেরচর, হাসনাবাদ, কান্দারগাও, নন্দনপুর, ভাজরা, চেঙ্গাকান্দি, গোলাপেরচর ও গঙ্গাপ্রসাদ। মেঘনা উপজেলার ভাটেরচর, বটতুলী, তালতুলী, সাতমোরা।
তিতাস উপজেলার মোহনপুর, কাককাইলী। মুন্সীগঞ্জ জেলার গাজারিয়া উপজেলার চাষিরচর, ষাটনল, কালিপুরা, ভাসারচর, বৈষারচর, কদমতুলী, বাউশিয়া থেকে ট্রলারের মাধ্যমে এখানে প্রতিদিন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এক থেকে দের হাজার খিরার বস্তা নিয়ে আসে।
ঘাটে নামানোর পর এসকল খিরা চলে যায় রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, টঙ্গী, জয়দেবপুর, কুমিল্লার নিমশার বাজার, লাকমাম, ফেনী, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের রেয়াজ উদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে।
প্রতিটি বস্তায় ৭০ থেকে ৭৫ কেজি মাল থাকে। এসকল বস্তা লোড আনলোড করতে কাজ করছেন প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। বিকেল ৩ টা থেকে মধ্যরাত কিংবা রাতভর কাজ করে শ্রমিকরা। এতে পারিশ্রমিক পাচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঘাটে কাজ করা শ্রমিক মো. রোকন মিয়া বলেন, ৩টা থেকে কাজ শুরু করি। যতক্ষন মাল থাকে ততক্ষন কাজ করি। কখনো সারারাত চলে। কখনো আবার রাত ১২টা। মাল বেশি নামলে বেশি ইনকাম হয়। ১ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।
পুরাতন ফেরিঘাটের আড়তদার আসাদুজ্জামান বলেন, মৌসুমে ৩ মাস চলে ব্যবসা। কৃষকরা আড়তে মাল নিয়ে আসে। তারপর স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার ৪শ থেকে ৫শ পাইকারি ও খুচরা বেপারী এই ঘাট থেকে খিরা নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী হারুন বেপারী বলেন, ৩০ বছর ধরে নোয়াখালী, চৌমুহনী, মাইজদী, সোনাইমুড়ী, লাকশামে আমি খিরার ব্যবসা করে আসছি।
এখানকার খিরা তিতা হয় না। ক্ষেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি বেশি। তাই, অন্য যে কোন জেলার তুলনায় দাউদকান্দির খিরার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন ৪শ ৫শ বস্তা চট্টগ্রামের রেয়াজ উদ্দিন বাজারে নিয়ে যাই। ঢাকার শ্যামবাজার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, ২০ থেকে ৩০ বস্তা মাল নেই প্রতিদিন। এই ঘাট থেকে ১৫/১৬ টাকা কেজিতে কিনে ২০/২২ টাকায় বিক্রি করি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা নুরুদ্দীন বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে ফেনী জেলায় খিরার ব্যবসা করছি। ফেনিতে দাউদকান্দির খিরার চাহিদা সবার আগে । বিকেল থেকে মাল ট্রাকে বোঝাই করে রাতে নিয়ে যাই। তারপর সকালে খুচরা বাজারে তা বিক্রি করি।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়ন ও ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নে প্রায় ৪শ হেক্টর জমিতে খিরার চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে গোলাপেরচর চেঙ্গাকান্দি এক মাঠেই রয়েছে ১২শ বিঘা জমি। কৃষি অফিস আশাবাদী প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ মে.টন খিরার ফলন হবে।
"মানবিক দাউদকান্দি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রুবেল ও সদস্য রোমান মিয়াজী বলেন, ঘাটের নিকটেই আমাদের বাসা। ছোট বেলা থেকেই দেখছি ঘাট থেকে ট্রাকে করে খিরা দেশের বিভিন্নস্থানে যায়। দাউদকান্দির খিরা সাধে অতুলনীয় তাই চাহিদা বেশি।
উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সদর উত্তর ইউনিয়নের গোলাপেরচর এক মাঠে ১২শ বিঘা ও গঙ্গাপ্রসাদ, চেঙ্গাকান্দি মিলে ১৯৫ হেক্টর জমিতে খিরার চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন ভালো। কৃষকরা খুশি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিন জানান, আমার ইলিয়টগঞ্জ ব্লকের টামটা ও ভিকতলা মাঠে ভালো ফলন হয়েছে।
খিরা সংগ্রহ চলছে। খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পেরে কৃষকরা খুশ। আশাবাদী প্রতি হেক্টর জমিতে ২২ থেকে ২৫ মে:টন উৎপাদন হবে।
কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক এআইপি মতিন সৈকত বলেন, বহু বছর আগ থেকে দাউদকান্দিতে খিরা চাষ করে আসছে আমাদের কৃষক। এটা আমাদের ঐতিহ্যের ফসল। এখানকার খিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এটা আমাদের জন্য গৌরবের।
পিকে/এসপি