বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট শেষ করার পর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাতে ক্ষোভ জন্মে। ইংরেজি ভাষায় বইও লিখেছিলেন। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেটাও লাভজনক হয়নি। একসময় একটি এনজিও করেন।
এরই মধ্যে নানা মহলের সহযোগিতা নিয়ে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। সেই সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রত্যন্ত এক এলাকায় থেকে কীভাবে এই সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলার রসদ পেলেন নাথান বম? তাঁর শক্তির উৎস কোথায়? এখন তিনি কোথায়ই–বা আছেন?
‘ছেলেটা যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী এবং অনেক ক্ষেত্রে হঠকারীও বটে। এটা অনেক আগে থেকেই টের পেতাম। কিন্তু নতুন রাজ্য তৈরির আন্দোলনের নামে এসব সন্ত্রাসী কাজ শুরু করলে বিষয়টা স্পষ্ট হলো আরও,’ পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর দুই বছরের বয়সে বড় আরেক পাহাড়ি ব্যক্তি।
ওই ব্যক্তি নাথানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তিসংক্রান্ত প্রায় সব কাজে সহায়তা করেছিলেন। পিছিয়ে পড়া একটি জনগোষ্ঠীর একজন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাবেন পড়াশোনা করার, সেটা নিশ্চিত করতে যত সম্ভব সবকিছু সহযোগিতা করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাথানকে ভর্তির জন্য তৎকালীন উপাচার্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সহযোগিতা করেন। ভর্তি হওয়ার পর নাথান একপর্যায়ে এই ব্যক্তির সঙ্গে আর তেমন কোনো যোগাযোগ রাখতেন না।
কেএনএফ নামের সশস্ত্র সংগঠন গড়ার ঘটনা জানার পর তিনি লোক মারফত তাঁকে সাবধান করে দিলেও নাথান সেগুলোর দিকে কর্ণপাত করেননি। কোথায় আছেন নাথান বম, কী উদ্দেশ্য কেএনএফের? নাথান বম পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার বিচারে পঞ্চম বম জনগোষ্ঠীর সদস্য।
এই জাতিগোষ্ঠীর প্রায় সবাই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। বান্দরবানের রুমা উপজেলার এডেনপাড়া সড়কে নাথানের পৈতৃক নিবাস। পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না কখনোই। তারপরও এই পরিবার এবং জনসংখ্যায় কম একটি জাতিগোষ্ঠীর ভেতর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়ার সুযোগ পাওয়া এলাকার অনেককেই গর্বিত করত। নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন।
জেএসএস–সমর্থিত এই ছাত্রসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। এর পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকতেন। নাথানের এলাকার অধিবাসী, সম্পর্কে নাথানের চাচা হন, এমন একজন বলছিলেন, ‘নাথান যে এত ভয়ানক একটা অবস্থানে চলে যাবে, সেটা কখনো ভাবেননি। তার কিছু কর্মকাণ্ড উদ্ভট লাগত। শুনতাম, এলাকার যুবকদের একত্র করে সে দল পাকাচ্ছে।
শুরুতে খুব একটা পাত্তা দিইনি। কিন্তু যখন তার গতিবিধি একটু সন্দেহজনক মনে হলো, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে অনুরোধ করেছিলাম এ পথে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে বড় ধরনের অর্থের লোভ পেয়েছিল। সেটাই তাকে শেষ করে দিল। এখন তার জন্য পুরো বম জাতির মানুষ একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’
নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন। জেএসএস–সমর্থিত এই ছাত্রসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। এর পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকতেন। খাগড়াছড়ির চেঙ্গি স্কয়ারে জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আবক্ষ মূর্তি নিম্নী দেওয়ানের সঙ্গে তৈরি করেন নাথান বম। তবে একপর্যায়ে জেএসসের সঙ্গও ছাড়েন তিনি। মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে নাথানের পড়াশোনায় একাধিকবার বিঘ্ন ঘটে। তারপর শেষে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। এরপর যখন এলাকায় ফিরে যান, তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
নাথান সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য বেশ তদবির করেছিলেন। কিন্তু এই কাজ তিনি পাননি। এটা তাঁকে বেশ ক্ষুব্ধ করে। নাথানের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলছিলেন, কয়েকজন চাকমা যুবক ওই চাকরি পেয়েছিলেন। নাথান মনে করতেন, তাঁর জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা কম বলে চাকরিটা তাঁকে দেওয়া হয়নি। চাকমারা সংখ্যায় বেশি, সে জন্য তাঁরা সুযোগ পেয়েছেন। এ জন্য নাথান চাকমাদের ওপর কিছুটা বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। চাকরি না পেয়ে নাথান একটি রিসোর্ট করে তোলেন পাড়ার কাছে। সেই ব্যবসা কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তাঁকে অনেকেই দেখেছেন ধর্মীয় বইপুস্তক নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করতে। এসব করতে গিয়ে মিজোরামের কিছু ধর্মীয় গুরুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁদের সহায়তায় ইউরোপেও যান নাথান।
সেখানে দুটি ডিপ্লোমা করেছেন বলে বন্ধুদের জানান। তবে অনেকেই এর সত্যতা সঠিক করে বলতে পারেন না। একপর্যায়ে তিনি বিয়ে করেন। এডেনপাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাথান বম। এই প্রতিষ্ঠানের অর্থের উৎস নিয়ে অনেকেরই ঔৎসুক্য থাকলেও তার রহস্য কখনো উন্মোচন করা যায়নি।
নাথান সেই সময় তাঁর জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে একত্র করার জন্য নানা রকম ভাবনা ভাবতে থাকেন। এ সময় ‘জো’ নামে ইংরেজি ভাষায় একটি বইও লিখে ফেলেন। এর দাম ৩০০ টাকা ছিল। এ সংগঠনের আড়ালে তলেতলে নাথান কর্মী সংগ্রহ করতেন বলে স্থানীয়া লোকজন মনে করেন। নাথানের ওই চাচা বলছিলেন, নাথান অর্থের হাতছানি পেয়েছিল কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে।
২০১৮ সালে সে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিল। কিন্তু সেই মনোনয়নপত্র বৈধ হয়নি। নাথানের আর নির্বাচনও করা হয়নি। তবে সশস্ত্র আন্দোলন করার প্রচেষ্টা তখন থেকেই চলছিল। ২০১৮ সালের শেষ দিকে নাথানসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের চিন রাজ্যে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরপর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন।
ফিরে আসার পর নাথানের কর্মকাণ্ড অনেকের চোখেই সন্দেহের সৃষ্টি করে। নাথানের দল কেএনএফের প্রচারের একটা বড় অংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জেএসএস এবং চাকমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অবস্থান নেওয়া। অনেকেই মনে করেন, জেএসসের বিরুদ্ধে একটা সশস্ত্র দলের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের হোক, এটা যাঁরা চাইতেন, তাঁরাই নাথানকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
২০২২ সালের দিকে ফেসবুকে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা, সশস্ত্র দলের নানান ছবি ইত্যাদি দিয়ে কেএনএফের কর্মকাণ্ড জাহির করলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরপর একাধিক সশস্ত্র অভিযানে নিরীহ মানুষকে হত্যার অভিযোগ ওঠে কেএনএফের বিরুদ্ধে।
অক্টোবরের দিকে র্যাবের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে কেএনএফের যোগাযোগের বিষয়টি তখন গণমাধ্যমকে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরই কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান দ্রুততার সঙ্গে পরিচালিত হতে থাকে। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠলে স্থানীয় গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি মিলে একটি শান্তি কমিটিও তৈরি করেন।
এই শান্তি কমিটির সঙ্গে ইতিমধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠক হয় গত ৫ মার্চ। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ২২ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই একাধিক ব্যাংকে হামলা, থানায় হামলাসহ নানা কর্মকাণ্ড শুরু করে দিল কেএনএফ। নাথানের এই তৎপরতার ফলে শান্তিপ্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরে আসার কথা জানান শান্তি কমিটির নেতারা।
সূত্র: বাংলাদেশ বুলটিন
পিকে/এসপি
এরই মধ্যে নানা মহলের সহযোগিতা নিয়ে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। সেই সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রত্যন্ত এক এলাকায় থেকে কীভাবে এই সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলার রসদ পেলেন নাথান বম? তাঁর শক্তির উৎস কোথায়? এখন তিনি কোথায়ই–বা আছেন?
‘ছেলেটা যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী এবং অনেক ক্ষেত্রে হঠকারীও বটে। এটা অনেক আগে থেকেই টের পেতাম। কিন্তু নতুন রাজ্য তৈরির আন্দোলনের নামে এসব সন্ত্রাসী কাজ শুরু করলে বিষয়টা স্পষ্ট হলো আরও,’ পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর দুই বছরের বয়সে বড় আরেক পাহাড়ি ব্যক্তি।
ওই ব্যক্তি নাথানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তিসংক্রান্ত প্রায় সব কাজে সহায়তা করেছিলেন। পিছিয়ে পড়া একটি জনগোষ্ঠীর একজন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাবেন পড়াশোনা করার, সেটা নিশ্চিত করতে যত সম্ভব সবকিছু সহযোগিতা করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাথানকে ভর্তির জন্য তৎকালীন উপাচার্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সহযোগিতা করেন। ভর্তি হওয়ার পর নাথান একপর্যায়ে এই ব্যক্তির সঙ্গে আর তেমন কোনো যোগাযোগ রাখতেন না।
কেএনএফ নামের সশস্ত্র সংগঠন গড়ার ঘটনা জানার পর তিনি লোক মারফত তাঁকে সাবধান করে দিলেও নাথান সেগুলোর দিকে কর্ণপাত করেননি। কোথায় আছেন নাথান বম, কী উদ্দেশ্য কেএনএফের? নাথান বম পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার বিচারে পঞ্চম বম জনগোষ্ঠীর সদস্য।
এই জাতিগোষ্ঠীর প্রায় সবাই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। বান্দরবানের রুমা উপজেলার এডেনপাড়া সড়কে নাথানের পৈতৃক নিবাস। পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না কখনোই। তারপরও এই পরিবার এবং জনসংখ্যায় কম একটি জাতিগোষ্ঠীর ভেতর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়ার সুযোগ পাওয়া এলাকার অনেককেই গর্বিত করত। নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন।
জেএসএস–সমর্থিত এই ছাত্রসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। এর পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকতেন। নাথানের এলাকার অধিবাসী, সম্পর্কে নাথানের চাচা হন, এমন একজন বলছিলেন, ‘নাথান যে এত ভয়ানক একটা অবস্থানে চলে যাবে, সেটা কখনো ভাবেননি। তার কিছু কর্মকাণ্ড উদ্ভট লাগত। শুনতাম, এলাকার যুবকদের একত্র করে সে দল পাকাচ্ছে।
শুরুতে খুব একটা পাত্তা দিইনি। কিন্তু যখন তার গতিবিধি একটু সন্দেহজনক মনে হলো, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে অনুরোধ করেছিলাম এ পথে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে বড় ধরনের অর্থের লোভ পেয়েছিল। সেটাই তাকে শেষ করে দিল। এখন তার জন্য পুরো বম জাতির মানুষ একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’
নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন। জেএসএস–সমর্থিত এই ছাত্রসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। এর পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকতেন। খাগড়াছড়ির চেঙ্গি স্কয়ারে জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আবক্ষ মূর্তি নিম্নী দেওয়ানের সঙ্গে তৈরি করেন নাথান বম। তবে একপর্যায়ে জেএসসের সঙ্গও ছাড়েন তিনি। মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে নাথানের পড়াশোনায় একাধিকবার বিঘ্ন ঘটে। তারপর শেষে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। এরপর যখন এলাকায় ফিরে যান, তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
নাথান সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য বেশ তদবির করেছিলেন। কিন্তু এই কাজ তিনি পাননি। এটা তাঁকে বেশ ক্ষুব্ধ করে। নাথানের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলছিলেন, কয়েকজন চাকমা যুবক ওই চাকরি পেয়েছিলেন। নাথান মনে করতেন, তাঁর জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা কম বলে চাকরিটা তাঁকে দেওয়া হয়নি। চাকমারা সংখ্যায় বেশি, সে জন্য তাঁরা সুযোগ পেয়েছেন। এ জন্য নাথান চাকমাদের ওপর কিছুটা বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। চাকরি না পেয়ে নাথান একটি রিসোর্ট করে তোলেন পাড়ার কাছে। সেই ব্যবসা কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তাঁকে অনেকেই দেখেছেন ধর্মীয় বইপুস্তক নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করতে। এসব করতে গিয়ে মিজোরামের কিছু ধর্মীয় গুরুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁদের সহায়তায় ইউরোপেও যান নাথান।
সেখানে দুটি ডিপ্লোমা করেছেন বলে বন্ধুদের জানান। তবে অনেকেই এর সত্যতা সঠিক করে বলতে পারেন না। একপর্যায়ে তিনি বিয়ে করেন। এডেনপাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাথান বম। এই প্রতিষ্ঠানের অর্থের উৎস নিয়ে অনেকেরই ঔৎসুক্য থাকলেও তার রহস্য কখনো উন্মোচন করা যায়নি।
নাথান সেই সময় তাঁর জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে একত্র করার জন্য নানা রকম ভাবনা ভাবতে থাকেন। এ সময় ‘জো’ নামে ইংরেজি ভাষায় একটি বইও লিখে ফেলেন। এর দাম ৩০০ টাকা ছিল। এ সংগঠনের আড়ালে তলেতলে নাথান কর্মী সংগ্রহ করতেন বলে স্থানীয়া লোকজন মনে করেন। নাথানের ওই চাচা বলছিলেন, নাথান অর্থের হাতছানি পেয়েছিল কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে।
২০১৮ সালে সে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিল। কিন্তু সেই মনোনয়নপত্র বৈধ হয়নি। নাথানের আর নির্বাচনও করা হয়নি। তবে সশস্ত্র আন্দোলন করার প্রচেষ্টা তখন থেকেই চলছিল। ২০১৮ সালের শেষ দিকে নাথানসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের চিন রাজ্যে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরপর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন।
ফিরে আসার পর নাথানের কর্মকাণ্ড অনেকের চোখেই সন্দেহের সৃষ্টি করে। নাথানের দল কেএনএফের প্রচারের একটা বড় অংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জেএসএস এবং চাকমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অবস্থান নেওয়া। অনেকেই মনে করেন, জেএসসের বিরুদ্ধে একটা সশস্ত্র দলের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের হোক, এটা যাঁরা চাইতেন, তাঁরাই নাথানকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
২০২২ সালের দিকে ফেসবুকে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা, সশস্ত্র দলের নানান ছবি ইত্যাদি দিয়ে কেএনএফের কর্মকাণ্ড জাহির করলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরপর একাধিক সশস্ত্র অভিযানে নিরীহ মানুষকে হত্যার অভিযোগ ওঠে কেএনএফের বিরুদ্ধে।
অক্টোবরের দিকে র্যাবের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে কেএনএফের যোগাযোগের বিষয়টি তখন গণমাধ্যমকে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরই কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান দ্রুততার সঙ্গে পরিচালিত হতে থাকে। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠলে স্থানীয় গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি মিলে একটি শান্তি কমিটিও তৈরি করেন।
এই শান্তি কমিটির সঙ্গে ইতিমধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠক হয় গত ৫ মার্চ। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ২২ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই একাধিক ব্যাংকে হামলা, থানায় হামলাসহ নানা কর্মকাণ্ড শুরু করে দিল কেএনএফ। নাথানের এই তৎপরতার ফলে শান্তিপ্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরে আসার কথা জানান শান্তি কমিটির নেতারা।
সূত্র: বাংলাদেশ বুলটিন
পিকে/এসপি