মুরাদনগরে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ, দুশ্চিন্তায় খামারিরা।বিভিন্ন সূত্রেজানা গেছে, কুমিল্লা জেলা মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ৩১৭টি গ্রামে বাড়ছে ভাইরাসজনিত ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা।
এই রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে গুটি বের হতে দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথায় গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন খামারি ও গরু পালনকারীরা। তবে রোগটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
মুরাদনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানা যায়, উপজেলায় প্রতিদিন ১০/১২টি গরু নিয়ে আসছে খামারিরা। আক্রান্ত গরুর শরীরে ফোসকা পড়ছে। কোনো গরুর পা ফুলে যাচ্ছে, কোনো গরুর গলায় ঘা হচ্ছে। এরোগে আক্রান্ত কত তা সঠিক নির্নয় করা যায়নি।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা, খামারি ও সংশিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ রোগটি সাধারণত মশা-মাছির বিস্তারের সময় ব্যাপক আকার ধারণ করে। মশা-মাছির ও খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এ রোগ ছড়ায়। টিকা দিয়ে আক্রান্ত থেকে গরুকে রক্ষা করা যায়।
আক্রান্ত গরু আলাদা ও মশারির ভেতর রাখা জরুরি। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে আক্রান্ত গরুর গা হঠাৎ গরম হয়ে যায়। শরীরজুড়ে ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠে। অনেকটা আঁচিলের মতো। পা, ঘাড়, মাথায় এসব বেশি ওঠে। চামড়া উঠে ক্ষতে পরিণত হয়।
এ রোগে আক্রান্ত গরু খাওয়া ছেড়ে দেয়। সব ধরনের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত গবাদিপশুর চোখ দিয়ে পানি ঝরে চোখ অন্ধ হয়েও যেতে পারে। এ রোগে মারা যাওয়ার হার ১-৩ শতাংশ। ষাঁড় গরুর ক্ষেত্রে ইনফাটিলিটি এবং গর্ভবতী প্রাণীতে গর্ভপাত ঘটে।
খুরা রোগের চেয়েও এটি বেশি ভয়ঙ্কর। টনকি ইউনিয়ন পরিষদ চৈনপুর বাদল ভূঁইয়া বলেন, তার ২টি গরু, জামাল ভূঁইয়া ২টি,) ফজলু মিয়া ৩টি গরু, সোনারামপুর গ্রামের মনির হোসেন, বলেন, তা ৪টি, বাতেন মিয়া ২টি, জারু মিয়া ৩টি, জামাল হোসেন ২টি গরু আক্রান্ত হয়েছে।
তাদের মতো গ্রামের বেশির ভাগ গরুই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত গরুগুলো ঝিমায়, খাবার কম খায়। জামাল হোসেন নামে এক খামারি বলেন, সপ্তাহখানেক আগে আমার খামারের দুটো গরু অসুস্থ হয়। পরে পশু চিকিৎসক ডাকা হলে তারা ইনজেকশন ও ওষুধ দিয়েছে।
গরু ভালো হবার পথে। জারু মিয়া বলেন, আমি রোগাক্রান্ত দুটি গরুকে প্রথম থেকে আলাদা রাখলেও আমার খামারে থাকা আরেকটা গরুর গায়েও দু’দিন আগে গুটি বের হতে শুরু করেছে। আক্রান্ত পশুকে আমি আলাদা রাখছি।
পল্লীচিকিৎসক রুহুল আমিন বলেন, গরুর লাম্পি স্কিন রোগ বর্তমানে উপজেলায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পর্যন্ত আমি আক্রান্ত ১০০ থেকে ১৫০ গরুর চিকিৎসা করেছি। আমার জানা মতে, লাম্পি স্কিন রোগে উপজেলায় এ পর্যন্ত কোনো গরু মারা যায়নি।
অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় গত দেড় মাসে গরুর লাম্পি স্কিন রোগের ওষুধ বেশি বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ (কর্মকর্তা) ডাঃ মোহাম্মদ আলী বলেন, গত এক মাসে প্রতিটি ইউনিয়নে পাঁচ থেকে সাতটি গরু আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
প্রাথমিকভাবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে এর সঠিক চিকিৎসা প্রদান সম্ভব। মারা যাওয়ার হার খুব কম। এ ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। মাছি বাহিত রোগ, রোগপ্রতিরোধ বাড়িয়ে দিতে জিং সিরাপ, লাইমো ভিট দিতে হবে।
জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। ঘুটা ফেটে গেলে এ্যান্টিবাইটিক দিতে হবে। এ রোগের আগে সকল গরুকে গুড পক্স দিতে হবে এলএসডি প্রতিরোধে কৃষক পর্যায়েও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হচ্ছে।
পিকে/এসপি
দুশ্চিন্তায় খামারিরা
মুরাদনগরে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ
- আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৩ ০৮:৩৪:২০ অপরাহ্ন