একুশে গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে সমাজের ক্ষত বয়ে বেড়ানো এক নারীকে নিয়ে সাংবাদিক, লেখক আউয়াল চৌধুরীর উপন্যাস 'আফসানা'। মানব সংসারের যাপিত জীবনের এক উল্লেখযোগ্য কাহিনীর চিত্রায়ন ঘটেছে এই উপন্যাসে। আফসানা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। খোলা বাতাসের মতো উড়ো যার জীবন।
হঠাৎ তার জীবনে ঘটে অনাকাঙ্খিত এক দুর্ঘটনা। যা তাকে সমাজ থেকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেকদূরে। এই উপন্যাসের মাধ্যমে সমাজের অগণিত নারীর নিরব গোঙানীর আওয়াজ শোনা যায়। বাসায় পার্টির সূত্র ধরে ধর্ষিত হয় আফসানা। পাল্টে যায় তার জীবন। তার শরীরে অন্য একজন মানুষের অস্তিত্ব চলে আসে যখন সে বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।
মানসিকভাবে বিধ্বস্ত আফসানার জীবনে আসে অমিত। জন্ম হয় ফুটফুটে এক শিশু 'আত্মা'। কিন্তু সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয় না। অজানা গন্তব্যে পা বাড়ায় আফসানা। জীবনের টানে নানা ঘাত প্রতিঘাতে আবার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করে। চাকরি নিলেও পদে পদে বিপদ আর লোভাতুর সাপদের ছোবলে দিশেহারা আফসানা।
শেষ পযর্ন্ত একাকী লড়াইয়ে আফসানা কি সফল হয়? এদিকে অমিত মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে। অমিতের পরিণতি বিয়োগান্তিক ধারায় প্রবাহিত হয়। যা পাঠককে চমকিত করবে। এমনই গল্প নিয়ে সমাজ সংসারের বাস্তবতা ও এক ভিন্নধর্মী গল্পের অবতারণা করেছেন লেখক।
লেখক আউয়াল চৌধুরী একজন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গবেষক ও সংগঠক। প্রায় দুই দশক আগে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্বজন সমাবেশে যুক্ত থাকার মাধ্যমে সাংবাদিকতার পাঠ বা লেখালেখির হাতেখড়ি হয়। এরপর নানা মাধ্যমে কাজ করে তিনি এখন একুশে টেলিভিশনে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (অনলাইন) হিসেবে কর্মরত আছেন।
শুধু লেখালেখি নয় সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে 'ল্যাম্প বাংলাদেশ' নামে সামাজিক সংগঠন তৈরি করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে ২০০৯ সালে সমাজকে আলোকিত করার মানসে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় নিজ গ্রাম কাশীপুরে তিনি 'চৌধুরী সমাজ কল্যাণ পাঠাগার' প্রতিষ্ঠা করে সমাজে নতুন অনুরণন তৈরি করেন।
ফলে সমাজে নানামুখী কাজ করতে গিয়ে সমাজের উচ্চবিত্ত জীবন থেকে শুরু করে নিম্ন বিত্তের জীবন ধারাকে দেখার, জানার ও বুঝার সুযোগ পেয়েছেন। তাই তিনি উপন্যাসে প্রান্তিক মানুষের জীবন সংগ্রাম ও মানবিকতাকেও টেনে এনেছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এই শ্রমিকরা যে তাদের পারিবারিক বেষ্টনীতে এখনো মানবিক এবং একটা সুশৃঙ্খল সম্মানজনক ধারায় পরিচালিত তা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন।
আউয়াল চৌধুরী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ফেনী সরকারি কলেজে পড়াকালিন সময় থেকেই তিনি লেখার চেষ্টা করতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন পত্রিকা ম্যাগাজিনে ছোট গল্প, প্রবন্ধ, নানা ঘটনা লিখে পাঠাতেন। তিনি বর্তমানে পরিবেশ ও বজ্রপাতের ক্ষতি নিয়ে, প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
আউয়াল চৌধুরী তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ইতিমধ্যে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি 'সংশপ্তক-২০২২' অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শেরে বাংলা একে ফললুল হক গবেষণা পরিষদ তাকে 'শেরে বাংলা গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড' ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ 'অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা'য় অবদানের জন্য অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
আউয়াল চৌধুরীর উপন্যাস আফসানা পাওয়া যাচ্ছে একুশে গ্রন্থমেলার ৫৪৯ ও ৫৫০ নাম্বার স্টলে। এর প্রকাশক জাবেদ ইমন। প্রকাশনী মুক্তদেশ। প্রচ্ছদ করেছেন রাহমান রোমেল। মূল্য ২৫০ টাকা। গ্রন্থমেলা
পিকে/এসপি
সমাজের ক্ষত বয়ে বেড়ানো নারীকে নিয়ে আউয়াল চৌধুরীর উপন্যাস 'আফসানা'
- আপলোড সময় : ১৮-০৩-২০২৩ ০১:১১:১০ অপরাহ্ন